Uncategorized

তেলাপোকা মারার ওষুধ: ঘরে ঢুকেই তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ পেয়েছিলেন তাঁরা

শায়ান–শাহিরদের বাসাটি দোতলায়। ওই বাসায় গত শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তেলাপোকা মারার ওষুধ দেন ডিসিএস অর্গানাইজেনশন লিমিটেড নামের বারিধারার একটি প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মী। সে সময় শিশুদের বাবা মোবারক হোসেনও মাস্ক পরে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।

মোবারক হোসেন আজ জানান, ঘরে তেলাপোকা নিধনের কাজ করা হবে বলে স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়েকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা এসে ঘরের কোনায় কোনায় টিস্যুর মধ্যে একটি ট্যাবলেট দিয়েছিল। তাঁরা বলেছিলেন, তিন ঘণ্টা পরে ঘরে প্রবেশ করা যাবে। আর ১০ ঘণ্টা পর ট্যাবলেটগুলো ফেলে দিতে বলেছিলেন।

বাসায় ওষুধ দেওয়া শেষে ঘর তালাবন্ধ করে বের হন মোবারক হোসেন। আগের বাসার এলাকা উত্তরায় বন্ধুদের আড্ডায় যান তিনি। আর তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরাও উত্তরায় একটি দাওয়াতে যান। তাঁরা একসঙ্গে গাড়িতে করে বাসায় ফেরেন ভোর চারটায়। অর্থাৎ পোকামাকড় নিধনকর্মীরা চলে যাওয়ার প্রায় ১০ ঘণ্টা পর। ঘরে ঢুকেই তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ পেয়েছিলেন বলে জানান মোবারক হোসেন।

মোবারক হোসেন বলেন, ঘরে ফেরার দুই–তিন ঘণ্টা পর স্ত্রী ও তিন সন্তান বমি করে। তাঁরা ভেবেছিলেন, এই গরমে দাওয়াতে ভারী খাবার খাওয়ার জন্য এমন হতে পারে। তখন ঘরের জানালাগুলো খুলে দেন। তেলাপোকা মারার জন্য যেসব জায়গায় ট্যাবলেটগুলো রাখা হয়েছিল, সেগুলো সংগ্রহ করে ফেলে দেন।

পরদিন শনিবার সারা দিন সবাই স্যালাইন, ফলের রসসহ তরল খাবার খান। রাতে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর কক্ষে দুই ছেলে বাবার সঙ্গে ঘুমায়। মা ছিলেন মেয়ের সঙ্গে আরেক কক্ষে। বড় ছেলে শায়ান ভোরে (রোববার) তাঁদের ডেকে বলছিল, ছোট ভাই যেন কেমন করছে। ছেলের অবস্থা দেখে মোবারক হোসেন দ্রুত ছেলেকে কোলে নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। সঙ্গে স্ত্রী, বড় ছেলে ও মেয়েও ছিল। বাসা থেকে অল্প দূরত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তখন চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই শাহিরের মৃত্যু হয়েছে। বড় ছেলে গাড়ি পার্ক করে জরুরি বিভাগে গিয়ে শোনে ছোট ভাই বেঁচে নেই।

মোবারক হোসেন বলেন, ‘ভাইয়ের মৃত্যুর কথা শুনে জাহিন (বড় ছেলে) বলে ওঠে, “দি ইজ নট ফেয়ার, বাবা (এটা ঠিক হয়নি না বাবা)।” অভিমান হলে ছেলে এমন বলে। মনে হচ্ছিল যেন ভাইয়ের চলে যাওয়ায় সৃষ্টিকর্তার ওপর ওর অভিমান হয়েছে। এর পরপরই ও অসুস্থ হয়ে যায়। হাসপাতালে জায়ানের (শাহির) দেহে বিষক্রিয়ার কথা বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। পরে তাঁরা জাহিনের (শায়ান) দেহেও বিষক্রিয়ার উপস্থিতি পেয়ে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ভর্তি করে নেন।’

বাসায় উপস্থিত শিশুদের খালা রওশন জাহান বলেন, রোববার রাতে শাহিরকে বনানী কবরস্থানে দাফন করার সময় হাসপাতাল থেকে ফোন আসে শায়ানের অবস্থা সংকটাপন্ন। রাত ১০টার দিকে সে–ও মারা যায়। দুটো ছেলেই মা-বাবার বাধ্য, খুব ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির ছিল।

Related Articles

Back to top button