Uncategorized

মামলার তথ্য গোপন করলেও কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বহালের অভিযোগ

রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল রানা টিটুর নামে প্রতারণা, ভাঙচুর, লুটপাট আর ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির মামলা রয়েছে। তবে মামলার এ তথ্য গোপন করে তিনি সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন।

তথ্য গোপন করার অভিযোগে জুয়েল রানা টিটু প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হলেও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেননি।

তবে হলফনামায় মামলার তথ্য গোপনের অপরাধে টিটুর মনোনয়ন বাতিলের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও আপিল কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সিটি নির্বাচন-২০২৩ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন জহুরুল ইসলাম নামে ওই ওয়ার্ডের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।

আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন টিটু। হলফনামায় নিজের মামলা সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেননি তিনি। আইনজীবীর মাধ্যমে হলফনামা প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেন। এরপর যাচাই-বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলোচিত চীনা অ্যাপ ই-মুভি প্ল্যানের প্রতারণাকে কেন্দ্র করে বাড়িঘর ও অফিসে ভাঙচুর, লুটপাট এবং ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির বিষয়ে গত ৪ এপ্রিল পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন শাকিলা জাহান নামে এক নারী। এই মামলার প্রধান আসামিই হলেন আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল রানা টিটু। মামলাটি এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।

যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী শাকিলা জাহান বলেন, আসামিদের কারণে আমি এলাকায় থাকতে পারি না। আমি এখন বাবার বাড়িতে থাকি। আমার এক ছেলে চতুর্থ এবং এক ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। এই জুয়েল রানা টিটুর কারণে আমার বাচ্চাদের পড়াশোনা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। উল্টো তারা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। আমি জুয়েল রানা টিটুর শাস্তি চাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিটুর পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে বছর দুয়েক আগে টিটু যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করেন। টাকা-পয়সাও হয়ে যায় হঠাৎ করেই। কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগের পদ পেয়েছেন। অসংখ্য মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া অ্যাপ ই-মুভি প্ল্যানের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের এই হাইব্রিড নেতা। তার মাধ্যমে ই-মুভিতে বিনিয়োগ করে এখন অনেক মানুষ নিঃস্ব।

হলফনামা অনুযায়ী, টিটুর হাতে এখন নগদ ১১ লাখ টাকা আছে।

হলফনামায় মামলার তথ্য গোপনের বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও নব্য আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল রানা টিটু বলেন, এটা আমার একটা ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দেন। এখন কী করতে হবে বলেন। আমি সেটাই করছি।

বিভাগীয় কমিশনারের কাছে মনোনয়ন বাতিলের জন্য অভিযোগকারী টিটুর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, হলফনামায় টিটুর মামলার তথ্য গোপনের বিষয়টি তিনি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তারপরও তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়নি। পরবর্তীতে তিনি আপিল কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তবে আপিলের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, তথ্য গোপনের জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। টিটুর মামলা থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। হলফনামায় সেই তথ্য নেই। যিনি অভিযোগ করছিলেন, তিনি এসেছেন সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে। তাই ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এখন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে আদালতে যেতে হবে।

Related Articles

Back to top button