Uncategorized

করের ছাড় কম, চাপ বেশি

শুল্ক-কর আদায়ে মরিয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একদিকে সরকারের বাড়তি ব্যয়ে অর্থ জোগান দেওয়ার চাপ, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করার বাধ্যবাধকতা। সব মিলিয়ে আসন্ন বাজেটে করছাড়ের চেয়ে কর আদায়ের উদ্যোগই বেশি থাকছে।

আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে। এই বিশাল লক্ষ্য অর্জনে এনবিআর বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুল্ক-কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে করারোপ হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কিছু ক্ষেত্রে বাড়তে পারে। আইএমএফের শর্ত পূরণে বাড়তি ৪৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে আগামী অর্থবছরে।

আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বেশির ভাগ আয়কর রিটার্ন জমাকারীকে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আসছে। কারণ, ৪৪ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমার রসিদ লাগবে। যেমন সঞ্চয়পত্র কেনা, ক্রেডিট কার্ড নেওয়া, রাইড শেয়ারিংয়ে গাড়ি দেওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়াসহ সাধারণ করদাতার নেওয়া কিছু সেবা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। আগের ৩৮টি সেবার ওপর এ বছর আরও ছয়টি সেবা যুক্ত হচ্ছে।

আবার মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার ঘোষণাও থাকতে পারে বলে জানা গেছে।

আগামী বাজেটে এনবিআর বিভিন্ন খাতে উৎসে কর বসিয়ে কর আদায়ে বেশি মনোযোগী। জমি-ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে, উল্টো নিবন্ধন ফি বাড়তে পারে। ভ্রমণ কর বাড়ানোর প্রস্তাব পাস হলে বিদেশ ভ্রমণে বাজেট বাড়াতে হবে।

মুঠোফোন, দামি গাড়ি, সিগারেট, কলম, প্লাস্টিকের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, টিস্যু, ন্যাপকিন—এসবের ওপর বাড়তি শুল্ক-কর আরোপের প্রস্তাব করতে পারেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এসব জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে। দাম কমতে পারে দেশি সফটওয়্যার, ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটর, বাইসাইকেল ইত্যাদির।

বহুল আলোচিত বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগের মেয়াদ বাড়বে না। কারণ, গত ১০ মাসে কেউ এই সুযোগ নেননি। জমি-ফ্ল্যাট কেনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নতুন আয়কর আইনে থাকছে। চলতি বাজেট অধিবেশনে আইনটি পাসের জন্য বিল আকারে উত্থাপন করা হবে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সুখবর নেই। এবার আর করপোরেট কর কমছে না।

এই বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির চাপ আছে। তাই করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়িয়ে স্বস্তি দেওয়া হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করা যাবে না, অর্থ লাগবে। তাই জনগণের ওপর করের চাপ না বাড়িয়ে করের জাল বিস্তৃত করা হবে। সঠিকভাবে কর জাল বিস্তৃত করতে পারলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জিত হবে। আমাদের এখন বাড়তি রাজস্ব লাগবে।’

Related Articles

Back to top button